Saturday, 25 April 2020

সুন্দরী লেপচাজগৎ ও কাঞ্চনজঙ্ঘা সংক্রান্ত...


ঠান্ডা!!ধুর কোথায় ঠান্ডা?ব্যান্ডেল থেকে যখন ট্রেন এ উঠলাম তখন এই কথাই ভাবছিলাম।ট্রেন ছাড়তেই শুরু হল মুখ চলা।ডিম বাদাম চিপস...এখন তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নামে । ধানক্ষেতে  চুপিসারে নামে অন্ধকার।অন্ধকারের মাঝে মাঝে আলোগুলো অদ্ভুত মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । রাত্রিকালীন যাত্রাতে সাইড লোয়ার সিটটার একটা অন্যরকম টান আছে। কোথায় কোথায় যেন হারিয়ে যায় মনটা । পাহাড়ের কথা বলতে বসলে কি যে বলতে থাকি ...গান গল্প করতে করতে সামান্য ঘুম এ ঢুলে মাঝরাতে নামলাম এনজেপি। ও আপনাদের তো বলাই হয়নি এবারে আমাদের গন্তব্য লেপচাজগৎ।ঘুমের কাছে ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রাম ।
চা পর্ব সেরে গাড়ি ঠিক করে চললাম লেপচাজগৎ।সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা দেখতে দেখতে মাঝে থামলাম চা খেতে। অচেনা জয়গার নাম জানিনা। গাড়ি থেকে নামতেই ঠান্ডাটা মালুম হল। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে নামলাম ।গরম চা আর কুকিস খেয়ে আবার পাহাড়ি রাস্তায় উঠা শুরু।পাহাড়ের একটা আলাদা টান আছে , আর দার্জিলিং ? সে তো বলে বোঝানো যাবে না । প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে থাকে আলাদা সৌন্দর্য । কুয়াশা গুলো গাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকে চোখে মুখে চুমু খেতে ব্যস্ত ।


 ঘুম থেকে যে রাস্তাটা সন্দক্ফুর দিকে চলে গেছে সেই রাস্তায় 11কিমি গেলেই লেপচাজগৎ। আগে থেকে ঠিক করে রাখা লক্ষ্মী হোম স্টে এবারে আমাদের মাথা গোঁজার জায়গা।পৌঁছেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানলো  হোম স্টের মালিক টিকারাম তামাঙ্গ।পাহাড়ের কোলে এত সুন্দর করে সাজানো একটা বাড়ি দেখলেই মন ভরে যায়।সুন্দর এক কাপ চা আর সাথে বিস্কুট আসতেই পুরো ব্যাপার জমে ক্ষীর।

ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে আলাপ হয়ে গেল পোলার এর সাথে। হোম স্টের কুকুর। তার সঙ্গী ছোট্ট বিড়ালছানা টির নাম পপুলার। অতি মিষ্টি।
আমরা চান টান করে বেড়িয়ে পরলাম লেপচা ভ্রমণ এ। চারিদিকে পাইন গাছের সারি আর মাঝে পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে রাস্তা।আমরা স্থানীয় একটি ছেলের সাথে গেলাম ভিউ পয়েন্ট। পাইন বন পেরিয়ে বেশ কিছুটা উপর এ উঠে একটি সমতল জায়গা যদিও সেটাও কোনো একটি পাহাড়ের মাথা।কষ্ট করে উঠে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এত কাছে এত বড় কাঞ্চনজঙ্ঘা!!!!এতবার উত্তরবঙ্গ এসেছি কিন্তু এত সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘা কোনোদিন দেখিনি। আমরা কয়েক মিনিট নির্বাক। ঘোর কাটতেই শুরু হোলো ছবি তোলা। প্রচন্ড ঠান্ডা কে অসম্ভব আদর করেই আমরা ছবি তুলতে থাকলাম।অপরূপ রূপ দেখতে দেখতে কখন যে ঘন্টা তিন কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি ।


দুপুরে ভাত আর ডিম দিয়ে সারলাম আহার। খুব আদর করে করা রান্না গুলো আমরা চেটে পুটে সাবার করলাম । দুপুরে হালকা রোদে একটু আড্ডা মারতে মারতেই বিকাল  । আমরা  টিকারাম ভাইয়ার সাথে গেলাম সুখিয়া বাজার। নানা জিনিস। সোয়েটার জ্যাকেট কেক জুতা সারি সারি সাজানো। বেশ কিছু কেনাকাটাও করলাম। ফেরার সময় সূর্য বিদায় নিয়েছে। বুঝতে পারলাম ঠান্ডা আস্তে আস্তে আমাদের গ্রাস করছে।
ফিরে এসে জমিয়ে চা নিয়ে বসে হোম স্টের ছোট মালিক যুবরাজ এর গান শুনতে লাগলাম। ও নতুন গিটার বাজানো শিখছে। নেপালি গান টা দারুন গায় । সাথে অরিজিৎ । রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা। এতটা ঠান্ডা আগে কখনও পাইনি । পরদিন জেনেছিলাম রাতে 1ডিগ্রি ছিল।





মাঝরাতে পোলার এর চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছু বুঝতে পারলাম না। ভয় ও লাগলো। চুপচাপ কম্বল এর তলায় সেঁধিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে জানলাম একটি কুকুর কে ধরে নিয়ে গেছে চিতা। এখানে এটা প্রায় হয়।
দ্বিতীয় দিন আমরা ঘুম মনেষ্ট্রী আর দার্জিলিং গেলাম। দার্জিলিং নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।তবে দার্জিলিং  আমার অন্যতম প্রেম । সেই কলেজ জীবনে অঞ্জন দত্তর গানে এই পাহাড়ি শহরটাকে জেনেছিলাম । না দেখেই প্রেমে পড়ি । দেখার পরে প্রেমটা দ্বিগুন হয়ে যায় । জলাপাহাড় , কিউরিও শপ , কেভেন্টর্স আমার মনকে আবিষ্ট করে রাখে । সারাদিন যদি আমাকে শাস্তি দিয়ে বসিয়ে রাখা হয় কেভেন্টর্স এর ছাদে তাহলে আমার থেকে আনন্দ কেউ পাবেনা ।কেভেন্টর্স এর কফি ...উউউম , ভাষা নেই , সাথে সসেজ । কাঞ্চনজংঘা দেখতে দেখতে হারিয়ে  যাই আমি ।

 পুরনো ঘুম মনেষ্ট্রী অনেকেই যান না।ঘুম স্টেশান এর পাশেই। একটা গালি দিয়ে সামান্য ঢুকেই।খুব শান্ত ,একটি জায়গা । বেশ কিছুটা সময় কাটালাম ।
লেপচায় ফিরি। লেপচাজগৎ খুব মিস্টি একটা পাহাড়ি গ্রাম।নির্জনতা এই গ্রামের মূল সম্পদ । পাহাড়ি শিশুগুলো মায়ের পিঠে চেপে কি সুন্দর নেমে যাচ্ছে পাহাড়ের নিচে। কেউ একমনে গাড়ি পরিস্কার করছে। কেউ ফুটবল এ ব্যস্ত। ২টো কি ৩টে দোকান। সব মিলিয়ে একটা সুন্দর প্রকৃতি। আর সব থেকে বড় প্রাপ্তি হাত বাড়লেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখ জুড়ানো কাঞ্চনজঙ্ঘা।

বিদায়কালে চোখে জল এসেছিল , কিন্তু অঞ্জনবাবু বলেছেন বয়েসের সাথে সাথে কমে যায় চোখের জল ...তাই চাইলেও পারিনা কাঁদতে , চোখের জল লুকিয়েই বিদায় জানলাম লেপচাজগৎ কে , আবার কোন একদিন আসবো এই বলে ...



একটি মানবিক আবেদন, একটু দেখবেন...


Friday, 24 April 2020

পাহাড় আর বাইক আমার বড্ড প্রিয়। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বাইক নিয়ে এদিক ওদিক । যাদের বাইক চলোনোর নেশা তাদের কাছে পাহাড়ে বাইক চালানো একটা স্বপ্ন । যদিও বাইকে  উত্তরবঙ্গ যেতে পারিনি এখনো , কিছুদিন আগে গেছিলাম বেলপাহাড়ি।বাঙলার পশ্চিম প্রান্তের পাহাড়ি গ্রাম । তারই কথা...

অনেকদিন বাইক টুর হয়নি।ভাবছিলাম কোথায় কোথায় যাই ।বাইক আর পাহাড় দুটোই আমায় খুব টানে । পাহাড়ি কোনো গ্রামের  কথা অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরছিল। না উত্তরবঙ্গ না । আমাদের দক্ষিণবঙ্গের ই কোনো পাহাড়ি গ্রাম ।
প্রস্তুতি শুরু । কাজের সূত্রে বেড়ানোর আগের তিনদিন কাটাতে হয়েছে চব্বিশ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে।ফলে কিছু প্যাক করার সুযোগ হয়নি । অনেক রাতে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে জাস্ট  কয়েকঘন্টার ঘুম। ভোর সাড়ে  চারটেতে রওনা দেবার  ভাবনা ছিল। কারণ পথ অনেক । বাড়ি থেকে  দূরত্ব ২৩১কিমি।শেষ পর্যন্ত গাড়ি স্টার্ট করলাম ৫.১৫ ।আমাদের এই যাত্রায় দুটি বাইক । আমরা মোট চার জন  ।  ডানকুনি পেরিয়ে বম্বে রোড। গাড়ি ছুটলো।টানটান রাস্তা । গাড়ির কাঁটা কখন যে আশি ছুঁয়েছে খেয়াল করিনি।  কোলাঘাট এ থামলাম,  চা পানের বিরতি।
এবারে আমরা যাচ্ছি বেলপাহাড়ি।ঝাড়গ্রাম জেলার  পাহাড় ঘেরা মিষ্টি জনপদ বেলপাহাড়ি।ইউটিউব দেখে গ্রামটাকে মন দিয়ে ফেলেছিলাম ।
মেদিনীপুরে দাঁড়ালাম সকালের পেট পুজো করতে।ইডলি সম্বর দিয়ে একটা দারুণ প্রাতরাশ সারলাম ।আবার গাড়ি স্টার্ট। গোপগড় এর রাস্তা ঢুকতেই শুরু হল অসামান্য দৃশ্যপট।কিন্তু বাদ সাধলো বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল যে বৃষ্টি হতে পারে। আমরা খুব একটা পাত্তা দিইনি। যাই হোক খারাপ ভালো রাস্তা পেরিয়ে আমরা বেলপাহাড়ি ঢুকলাম। রাহুল দা কে আগে থেকেই বলা ছিল ওনার গেস্ট হাউসে থাকবো । সেই মত সব ব্যবস্থা করেও রেখেছিলেন। খুব সুন্দর করে সাজানো বেলপাহাড়ি গেস্ট হাউস।ঘরগুলি খুব পরিষ্কার ও আধুনিক ব্যবস্থা সম্পন্ন। টিপ টিপ বৃষ্টি আমাদের ক্রমাগত বাধা দিচ্ছিল ।কিন্তু যখনই পাহাড়ের কাছে হাত পেতেছি নিরাশ করেনি ওর অসামান্যতা থেকে  । এবারও না ।

একটু ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ি...
আমরা আজকে যাবো
ঢাঙিকুসুম
চাতরা
কাঁকড়াঝোড় ।
টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তবে আমাদের দমন করা যাবেনা। আমরা গাড়ি ছোটালাম ঢাঙিকুসুমের দিকে। পথ এত সুন্দর হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।একটা মিষ্টি পাহাড় ঘেরা গ্রাম। তার এক পাশে ডু ংরি ঝর্ণা । যদিও এখন জল নেই।কিন্তু বনের পথ অসামান্য।বনের পথে গাড়ি বন্ধ করে আমরা উপভোগ করছিলাম নিষ্তব্ধতা। পাতার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পরার শব্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।  এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে আমরা অনেক সময় আমরা  ঝাড়খণ্ড এ ঢুকে গেছিলাম । এই জায়গার অনেক অংশ ঝাড়খণ্ড রাজ্যে।


ঢাঙিকুসুম দেখে আমরা গাড়ি ছোটালাম কাঁকড়াঝোড় এর দিকে।না আমার আগে পাহাড়ে গাড়ি চালাবার কোনো অভিজ্ঞতা ছিলনা। কিন্তু কাঁকড়াঝোড় এর রাস্তায় সেটা হয়ে গেলো। পথের বাঁকগুলি উত্তরবঙ্গের পাহাড়কে মনে করিয়ে দিচ্ছিল।আদিবাসী মানুষের সহজ সরল জীবন এই গ্রামের সম্পদ। এখান থেকে ঘাটশিলা মাত্র ২০ কিমি ।কাঁকড়াঝোড় গ্রামটি ছবির মত। আঁকাবাঁকা পথ ও সামনে পাহাড় । বারেবারে আমাদের গাড়ি থমকে গেছে ছবি তুলতে।বৃষ্টিতে গ্রামের রূপ আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে ।ফেরার পথে রাহুল দার কথা মত আমরা গেলাম চাতরা , এটি প্রাকৃতিক একটি জলাধার। যদিও বৃষ্টি ও বনের পথ এর জন্য আমরা সবটা যেতে পারিনি। জলধারার নিম্ন অংশ দেখেই ফিরেছি।জলধারার ওপর গাড়ি নিয়ে একটু কেত ও মারলাম।আবার বৃষ্টি। আমরা ফেরার পথ ধরলাম ।বেলপাহাড়ি আসলে অনুভব করার জায়গা। ফেরার পথে মুড়ি , চপ নিয়ে ফিরলাম। রাতের খাবার এর অর্ডার দিয়ে এলাম, রুটি আর দেশি মুরগির মাংস । এখানে বেশি রাত অবধি দোকান খোলা থাকেনা।গেস্ট হাউসে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আমরা বসলাম চপ মুড়ির আড্ডায়। সারাদিনে তিনশো কিমি গাড়ি চালানোর  ক্লান্তি এক নিমেষে উধাও।আড্ডায় উঠে এল দিল্লি ভোট থেকে এনআরসি প্রসঙ্গ।রাতের খাবার এল যথা সময়ে । আহা মাংসটা এত সুন্দর করেছিল আজও মুখে লেগে আছে।ডিনার সেরে সোজা বিছানায়।
 এক ঘুমে সকাল। ঘুমে ভাঙলো মোরোগের ডাকে। আমাদের গেস্ট হাউসটি একদম জঙ্গল লাগোয়া। নানা পাখির ডাকে সকালটা অসামান্য। আমরা দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম।আজ অনেক কিছু দেখার আছে। গতকাল বৃষ্টির পর আজ আবহাওয়া খুব সুন্দর।ডালপুরি চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। আজ যাবো
গাডরাসিনি পাহাড়
খাঁদারানী লেক
লালজল পাহাড়
ঘাঘরা ফলস






প্রথমেই গেলাম গাডরাসিনি পাহাড়। রাস্তা আবারও অসামান্য ।পাহাড়ের তলায় আছে আশ্রম। প্রায় ১০০০ মিটার উঁচু এই পাহাড়।কিছুটা উঠে বাসুদেব মন্দির।মন্দির চাতালে বসে একটু বিশ্রাম নিলাম। আবার ওঠা। পাহাড়ের মাথায় শিব মন্দির। পাহাড়ের একদম ওপর থেকে দৃশ্য চোখ জুড়ানো ।একদিকে খাঁদারানী লেক আর একদিকে সবুজ পাহাড় । যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড় । যারা পাহাড় প্রেমী তাদের জন্য এই পাহাড় মুগ্ধতা । বারবার বলতে ইচ্ছে করছিল আহা কি  দেখিলাম জন্ম জন্মান্তরেও ভুলবো না।আমরা অনেকক্ষন পাহাড়ের মাথায় বসে রইলাম এক পাহাড় বিষ্ময় নিয়ে।এবার নামার পালা। খুব সাবধানে । না হলে পিছলে যাবার প্রবল ভয়।নিচে নেমে আশ্রমে গেলাম। ফল প্রসাদ দিল । সাথে এক গ্লাস প্রশান্তির জল ।এবার যাবো খাঁদারানী লেক।আমরা একটা গ্রামের পথ ধরলাম। সাধারণ মানুষের জীবন দেখতে দেখতে খাঁদারানী এলাম। না মোটেই খাঁদা নয় এই রানী। এক নৈস্বর্গিক রূপ চারিদিকে
। লেকের জলে পরিযায়ী পাখিদের জলকেলি আমাদের  বাইক চালানোর সব কষ্ট দূর করে দিল।
এবার গন্তব্য লালজল পাহাড়।এই পাহাড় যাবার রাস্তা অবর্ণনীয় সুন্দর , অসামান্য ,অভাবনীয় । আর ভাষা পাচ্ছিনা।প্রায় সাত আট কিমি রাস্তা আমাদের মোহিত করে রেখেছিল। লালজল পাহাড়ের তলায় মন্দির দর্শন করলাম। কিন্তু পাহাড়ে আর উঠিনি।খেজুর গুড় তৈরি হচ্ছিল এখানে , খেলাম এবং কিনলাম। খুব সুন্দর স্বাদ ।এখান থেকে বেড়িয়ে আমাদের শেষ গন্তব্য ঘাগরা ফলস ।এখন জল কম। তবে তিরতির করে বয়ে চলা জলধারা বেশ মনোরম ।  এখানে গিয়ে পর্যটকদের আচরণে খুব মর্মাহত হলাম। নানারকম প্লাস্টিক এর প্যাকেট , সিগারেট এর প্যাকেট চারিদিকে ছড়ানো । আমাদের এক বন্ধু প্রচুর প্যাকেট ওখান থেকে তুলে ডাস্টবিন এ ফেলে দেয়।সেলফি তুলে নাচানাচি করে আমাদের ফেরার পালা। সোজা মেদিনীপুর। এখানেই দুপুর না বিকালের খাবার খেয়ে আবার যাত্রা। ফেরার পথে শের ই পাঞ্জাব এ চা সিঙ্গারা লস্যি । চা টা কিন্তু খাসা করে ...
এবারের মত শেষ।দু দিনে মোট গাড়ি চালিয়েছি ৬০০ কিমি । ছবি গুলি পাতি মোবাইলে তোলা , একটু ক্ষমা করে দেবেন।

রাহুল দার নম্বর -8972999926

Tuesday, 21 April 2020

সুইসাইড



গোঁফের তলায় ঘুমিয়ে থাকে
আমার সাতপুরুষ আগের এক সুইসাইড নোট ।
এক দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা ।
পাঠোদ্ধারের জন্য তিন সদস্যের কমিটি
আজই জমা দিয়েছে তাদের রিপোর্ট ,
তাতে নাকি লেখা আছে -
মৃত্যুর জন্য রাষ্ট্র ও দেবতা দুজনেই দায়ী । 

Monday, 20 April 2020

বেড়ালটা



লক্ষীর ভাঁড়ার থেকে রোজ একটা করে টাকা তুলে নিই
কেউ বুঝতেও পারেনা।
(হয়তো বুঝবে একদিন )

দুপুরের ভাতঘুমে অচেতন
সারা বাড়ি জানতেও পারেনা আমার কুকর্ম।
শুধু সাদা ছোপ ছোপ পাশের বাড়ির
বেড়ালটা দেখে ফেলে আমায়। 

Thursday, 16 April 2020

অবনী বাড়ি নেই



অবনী বাড়ি নেই ,
সেলসের কাজে মহিষাদল থেকে মুথাবাড়ি...
সপ্তাহান্তে একবার বাড়ি আসে ,
লাজুক বউয়ের মুখটা দেখতে ।
রিক্স করে মাঠের ধারে যায় -
ঝালমুড়ি চপ খেতে খেতে
বাড়ি ফেরে ।
রাতের চাঁদ মারা গেলে সূর্য ওঠে ,
অবনী ট্রেন ধরে কুচবিহারের ।

অবনী বাড়ি থাকেনা
সেলসের কাজে ...











Wednesday, 15 April 2020

আমার দেশ এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে


আমার দেশ এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে
হাতে ছেঁড়া ব্যাগ ,
কেউ আবার বস্তা এনেছে
দু-এক মুঠো চাল
ভাঙা গম আর কিছুটা
ডালের আশায় ।

মহামারীর বসন্তে কোকিল ডাকে ,
আমার দেশ দাঁড়িয়ে থাকে
প্রতিশ্রুতির পয়সা পকেটে আসবে বলে ।
শ্মশানেও উপচে পড়ছে লাশ
গোরস্থানে গণকবর !
চিল ওৎ পেতে আছে।
তবু -
সৎকারের আশায়
আমার দেশ এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে ।

Monday, 13 April 2020

কেমন আছিস ? 

কেমন আছিস গঙ্গার ঘাট , হলুদ রঙের পাতা ?
বসন্ত রঙ ফিকে এখন আমার স্কুলের খাতা ।
বটতলাটা ভালো আছে ? চায়ের দোকান হরি ...
আড্ডাই ছিল প্রেম আমাদের অঙ্কেতে ফেল করি।
গঙ্গার ঘাট ভাঙা এখন ? শিমুল গাছটা আছে ?
রিষ্টব্যান্ডটা এখনও কি যত্নে তোরই কাছে ...
রঙচটা ওই পার্টি অফিস বিপ্লবী দিনগুলো
বদলে দেবার স্বপ্নটাতেই সজোরে টান দিলো।
বর্ষাকালটা একইরকম ভাঙা ছাতার তলায়
ডালগোনা কফি , রিসর্ট , পার্টি,  অতীত তবু ভাবায় ...
চোখের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির ভালোবাসা ,
কোথায় যেন ফিকে এখন অভিনয়টা খাসা ।
কয়েকটা মাস কয়েক বছর অনেকগুলো দিন
তোরই কাছে ভালবাসার সবচেয়ে বড় ঋণ। 

Saturday, 11 April 2020

চাঁদের আলো ছাড়া বাকি সব মিথ্যা


সব শালিক ফিরে আসছে মহল্লায়
বৃষ্টির জল ধুয়ে দিচ্ছে
মহাকালের ধুলো ।
আমাদের চেতনা হয়নি বলে
সেই যে জ্যাঠামশাই ছেড়ে চলে গিয়েছিল
বাগানে কলমি শাক হচ্ছে দেখে
আবার ফিরছে ।

তবে
বড় কঠিন সময় জ্যাঠামশাই!
অন্ধকার হাতড়াচ্ছি ,
চাঁদের আলো ছাড়া বাকি সব মিথ্যা ।



Thursday, 9 April 2020

পৃথিবীর মন ভালো নেই


রাস্তায় গলে পড়ছে
সদ্যস্নাত মৃতদেহ ।
আমি জানালায় মুখ বাড়িয়ে
নাক ঢাকছি রুমালে।


সাইরেন থেমে গেছে ।
কান্নার শব্দে মিশে আছে

হরিবোল ...


কিভাবে আসছে সনাক্তকারীরা
জানিনা !
সনাক্তকরণের উপায় হিসাবে
কবিতা পড়ছে সেনাবাহিনী।


মহাকাশের শেষ নক্ষত্রটাও
আজ খসে পড়লো
এখন পড়ে শুধু
অজস্র পাণ্ডুলিপি ।


একটি মানবিক আবেদন
আদিবাসীরাই কিন্তু আমাদের দেশের আদি  অধিবাসী।
পৃথিবীর অসুখের কারণে আমার আপনার পূর্ব পুরুষরা আজ গভীর সঙ্কটে।
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের প্রাচীনতম জাতিগোষ্ঠী শবর, ভূমিজ-সহ অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষজন লকডাউনের কারণে গভীর খাদ্যসঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এরা প্রত্যেকেই দ্রাবিড় নরগোষ্ঠীর অংশ হিসেবে চিহ্নিত।
আমাদের রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের জেলা বাঁকুড়ার কিছু অঞ্চলে এই  সকল জাতিগোষ্ঠীর স্থায়ী ঠিকানা। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বাস এই অঞ্চলে। প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকায় এদের পেটেও আজ "লকডাউন"। সরকার তার সাধ্যমত চেষ্টা চালাচ্ছেন।তবুও ...
আসুন, আমরা মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। এই জনজাতিকে বাঁচাতে আপনিও আপনার সাহায্যের হাতটা একটু লম্বা করুন।

এই বার্তাটি আপনার গান /নাচ /কবিতার ভিডিওর সাথে জুড়ে দিন , তাহলে আরও বেশি মানুষের কাছে সহজে ছড়িয়ে যাবে ।

ধন্যবাদ।

Description : "Corona Donation"
A/C No. 50100197737146
IFSC Code : HDFC0002505
Donation to be made to: Saikat Sundar Mandal
Google Pay : 9732069997

Monday, 6 April 2020

চেয়ার ফাঁকা থাকেনা কখনো 

চেয়ার ফাঁকা থাকেনা কখনো , 
আপনি না বসলে 
অন্য যে কেউ বসে পড়তে পারে 
বা 
অন্য কেউ বসে আছে হয়তো । 
চেয়ারের হাতলে আপনি হাত রাখতে পারেন , 
সে আপনি চেয়ারে বসুন বা না বসুন । 
আপনি চেয়ারের হাতলে হাত না রাখলে 
অন্য যে কেউ রেখে দিতেই পারে । 
চেয়ারের ফাঁকা থাকা বা বসে থাকা 
ভীষণই আপেক্ষিক । 

তবে যাই হোক 
চেয়ার ফাঁকা থাকেনা কখনো । 


Sunday, 5 April 2020

পোস্ট অফিস 

সব প্রেমই আসলে দূরবর্তী 
একটা গ্রামের পোস্ট অফিস । 
আশেপাশে দু' একটা দোকান ;
চা , বিড়ি , ঘুগনি 
মাঝে মাঝে স্ট্যাম্প মারার শব্দ
কিংবা খসখসে নোট গোনার । 
একা পোস্টমাষ্টার ভীষণ একলা । 
পুরোনো পাখার ঘড়ঘড়ানিতে 
মিশে থাকে অভিমানের শব্দগুলো , 
ক্লান্ত ছুটির দিনে 
পোস্ট অফিসেও তালা ঝোলে । 

আসলে সব প্রেমই ...

Friday, 3 April 2020

মানচিত্র কখনো দেশ হতে পারে না 


মানচিত্র কখনো দেশ হতে পারে না , 
দেশ হলো তোমার পাশের বাড়ি , 
দেশ হলো বন্ধ চা বাগান । 
দেশ নকশালবাড়ির চারু দা -
দিদার হাতের নাড়ু 
সেও তো একটা দেশেরই নাম । 
দেশের কোনো সীমানা হয় না , 
পাঁচিলশূন্য একটা ভূখণ্ডের 
নাম ই তো দেশ । 
একটা লাল পতাকা পতপত করে 
উড়বে পাহাড়ের মাথায় , 
আর ল্যাংটো ছেলেটা 
আঙুল দেখিয়ে বলবে 
ওই তো,  ওই তো -
আমার দেশ । 

Thursday, 2 April 2020

ভাবনারা 

আকাশে সূর্যাস্ত দেখা দিলে আমি ঘরে 
ফিরে আসি গোধূলি গায়ে মেখে , 
পুঁজিবাদী ভাবনারা টুপ টুপ ঝরে পড়ে 
দরমার ফাঁকটুকু দেখে । 
দেশের কথা

হাট বসেছে নদীর ধারে
সীমান্তপথ ঘেঁষে
চা দোকানী ঝাঁপ তুলেছে
তাদের নতুন দেশে ।

রান্নাঘরের পিছন দিকে
রহিম চাচার বাড়ি
বিভাজনের সেদিন থেকেই
ওদের সাথে আড়ি ।

এক ফর্মার দেশটা হল'
পদ্য ভরা ঝোলা
এই পৃথিবীর সব খামারই
চাষীর জন্য খোলা ।

দেশের একটা শ্মশান আছে
নথিবদ্ধ খাতা
সীমানা আঁকা মানুষগুলোর
তাতেই বিছানা পাতা ।

নষ্ট চোখ

  রোজ বেচুদার গোলার পাশ দিয়ে যাচ্ছি  আর দাঁড়িয়ে পড়ছি। একটু একটু করে গড়ে উঠছে  মা...  মায়ের হাত পা চোখ...  আমি দেখছি তিলোত্তমার হাত পা ...